গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের সাতখামাইর অঞ্চলের ডালেশ্বর গ্রামে কৃষি উদ্যোক্তা মতিউর রহমান প্রতিষ্ঠা করেছেন “বাওয়ানি এগ্রো”। সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে পরিচালিত এই কৃষি প্রকল্পটি দেশের কৃষি খাতে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
মতিউরের বাগানে রয়েছে প্রায় ৫০০টি মিশরীয় হুলুদ মাল্টার গাছ, পাশাপাশি দার্জিলিং কমলা এবং চায়না মিষ্টি কমলাসহ প্রায় ৫৬০টিরও বেশি ফলের গাছ। সম্পূর্ণ অর্গানিক পদ্ধতিতে, কোনো রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ছাড়াই এই বাগানটি পরিচর্যা করা হয়।
২০২১ সালের জুলাই মাসে মিশরীয় হুলুদ মাল্টার চারা রোপণ করা হয়। প্রায় সাড়ে তিন বছর পর এই জাতটি প্রথম ফলন দিয়েছে। মিশরীয় হুলুদ মাল্টা উচ্চ ফলনশীল এবং ভাইরাস প্রতিরোধী একটি জাত। এর গুণাবলি কৃষি উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করছে। প্রথম ফলনেই মতিউরের বাগান থেকে প্রায় ১১ টন মাল্টা উৎপাদিত হয়েছে।
একটি পূর্ণবয়স্ক মিশরীয় হুলুদ মাল্টা গাছে বছরে ১০০ কেজিরও বেশি ফলন সম্ভব। পাঁচ বছর বয়সী একটি বাগান থেকে মাল্টার ফলন হতে পারে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি।
মিশরীয় হুলুদ মাল্টার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এর মিষ্টতা এবং বেশ রসালো। সুগার ব্রিক্স মেশিনে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এই মাল্টার মিষ্টতার পরিমাণ ১০ স্কেলে রয়েছে । এটি যেমন মিষ্টি ও রসালো, তেমনই সুস্বাদু।
বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় ১৫-২০ কোটি টাকার মাল্টার চাহিদা রয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই চাহিদার পুরোটাই আমদানি করা হয়। আপেলের পরে বিদেশি মাল্টাই দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আমদানিকৃত ফল।কৃষি উদ্যোক্তা মতিউর রহমানের মতো আরো উদ্যোক্তা তৈরি হলে দেশের ফল আমদানির ওপর নির্ভরতা অনেকটাই কমতে পারে। গাজীপুরসহ বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলে অনাবাদী জমিতে এ ধরনের ফল চাষের উদ্যোগ নেয়া গেলে অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন অধ্যায় সূচিত হবে।
গাজীপুরের প্রায় ২৮ হাজার হেক্টরের বেশি জমি অনাবাদী রয়েছে। মতিউর রহমানের মতো নতুন কৃষি উদ্যোক্তারা এগিয়ে এলে পরিত্যক্ত জমিগুলো ব্যবহার করে দেশের কৃষি খাতে অভূতপূর্ব পরিবর্তন আনা সম্ভব। মতিউর রহমান বলেন, “আমি চাই, আমার বাগান দেখে দেশের কৃষকরা উৎসাহিত হোক। আমাদের দেশের মাটি ও জলবায়ু কৃষি খাতের জন্য দারুণ সম্ভাবনাময়। জৈব পদ্ধতিতে চাষ করলে যেমন স্বাস্থ্যকর ফসল উৎপাদন করা সম্ভব, তেমনই অর্থনৈতিক দিক থেকেও এটি লাভজনক। তবে এটার কৌশল জানতে হবে। কৃষিকে মনে প্রাণে ধারণ করতে হবে “
মতিউরের এই উদ্যোগ দেশের মাটিতে চাহিদা সম্পন্ন ফল উৎপাদনে এক নতুন পথ দেখিয়েছে। এটি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি কৃষি উদ্যোক্তাদের অনুপ্রাণিত করবে।
মন্তব্য করুন