নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণা ঘিরে বিশ্বজুড়ে শোরগোল শুরু হয়েছে। সোমবার (২৫ নভেম্বর) নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোস্যালে একটি পোস্টে তিনি জানান, দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ ট্যারিফ আরোপ করবেন। পাশাপাশি চীন ফেনটানিল মাদক চোরাচালান বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে দেশটির ওপর আরও ১০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক বসানোর ঘোষণা দেন।
বিশ্বের শীর্ষ আমদানিকারক যুক্তরাষ্ট্র তাদের মোট আমদানির ৪০ শতাংশ মেটায় চীন, কানাডা ও মেক্সিকো থেকে। যার আর্থিক পরিমাণ বছরে প্রায় ৩,২০০ বিলিয়ন ডলার। তবে ট্রাম্পের হুমকি বাস্তবায়িত হলে এসব দেশ থেকে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ট্রাম্প অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে মেক্সিকো ও কানাডা অবৈধ অভিবাসন ও মাদক চোরাচালান রুখতে ব্যর্থ। পোস্টে তিনি বলেন, “এই সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা ও অধিকার উভয় দেশেরই রয়েছে। আমরা তাদের এই ক্ষমতা প্রয়োগের দাবি জানাই। যতক্ষণ তারা তা করবে না, তাদের এজন্য মূল্য দিতে হবে।”
ট্রাম্পের ঘোষণার প্রভাব ইতোমধ্যেই বিশ্ব অর্থনীতিতে দেখা গেছে। মার্কিন ডলারের বিপরীতে দুর্বল হয়েছে কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের মুদ্রার মান। মেক্সিকোর পেসোর মান কমেছে ২ শতাংশ, আর কানাডীয় ডলারের মান গত সাড়ে চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে পৌঁছেছে। একইসঙ্গে চীনা ইউয়ানও উল্লেখযোগ্য হারে দর হারিয়েছে।
শেয়ারবাজারেও পড়েছে প্রভাব। ইউরোপীয় গাড়ি নির্মাতাদের শেয়ারের দাম কমেছে। জার্মানির ফোকসওয়াগন গ্রুপের শেয়ারের দর ২.২৬ শতাংশ কমে গেছে, স্টেলান্টিসের শেয়ার মূল্য কমেছে ৪.৫৪ শতাংশ।
কানাডার উপপ্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড এক বিবৃতিতে দুই দেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তুলে ধরে বলেন, “কানাডা সীমান্ত সুরক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে। যুক্তরাষ্ট্র কানাডার প্রধান বাণিজ্য সহযোগী, যা সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখে।” তবে তিনি সরাসরি ট্রাম্পের অভিযোগের জবাব দেননি।
অন্যদিকে, মেক্সিকো এখনও ট্রাম্পের হুমকির বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
ট্যারিফ আরোপ হলে কানাডা ও মেক্সিকোর রপ্তানির খরচ বাড়বে, যা মার্কিন ভোক্তাদের ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। বিশেষ করে মেক্সিকোর অটোমোবাইল শিল্প এবং ইলেকট্রনিক্স উৎপাদন খাতে প্রভাব পড়তে পারে। মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা গাড়ি এবং ইলেকট্রনিক্স পণ্যের প্রধান গন্তব্য মার্কিন বাজার।
কানাডার ক্ষেত্রে পেট্রোলিয়াম পণ্য, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং অটোমোবাইল রপ্তানি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কানাডার চেম্বার অব কমার্সের হিসাবে, মাত্র ১০ শতাংশ ট্যারিফ আরোপেই কানাডার অর্থনৈতিক ক্ষতি বছরে ২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত কেবল বাণিজ্যিক নয়, রাজনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জটিল করে তুলতে পারে। ইতোমধ্যেই কানাডা এবং মেক্সিকো উভয় দেশেই অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা গ্রহণের পর ট্রাম্প তার ঘোষণাগুলো বাস্তবায়ন করবেন কি না, তা নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে।
মন্তব্য করুন